পেট্রোল ইঞ্জিনের জ্বালানী পদ্ধতি (Fuel system of petrol engine)

পেট্রোল ইঞ্জিনের জ্বালানী পদ্ধতিঃ-

যে পদ্ধতির মাধ্যমে পেট্রোল ইঞ্জিনের জ্বালানী চাহিদা মোতাবেক কার্বুরেটরে প্রবেশ করে, সেখানে পরিমিত বাতাসের সঙ্গে মিশে সুচানু মিশ্রণ প্রস্তুত হয় এবং ইঞ্জিনের গ্রহন স্ট্রোকে সিলিন্ডারে প্রবেশ করে এবং স্পার্ক প্লাগের স্ফুলিংগের দ্বারা নির্দিষ্ট সময়ে দহন ঘটিয়ে শক্তি উৎপাদন করা হয় সেটিই পেট্রোল ইঞ্জিনের জ্বালানী পদ্ধতি।

ইঞ্জিনের শক্তির মূল উৎস হল জ্বালানী। স্পার্ক ইগনিশন ইঞ্জিনে কার্বুরেটরের মধ্যে জ্বালানিকে বাতাসের সঙ্গে মিশ্রিত করে ইঞ্জিন সিলিন্ডারে সরবরাহ করা হয়। পর্যাপ্ত পরিমাণ জ্বালানি ধারণ করা, ইঞ্জিনের চাহিদা অনুযায়ী দহনযোগ্য এয়ার ফুয়েল মিক্সার তৈরি করা এবং যথাসময়ে এয়ার ফুয়েল মিক্সার সিলিন্ডারে সরবরাহ করা স্পার্ক ইগনিশন ফুয়েল সিস্টেমের প্রধান কাজ। উল্লেখিত কাজগুলো সম্পাদনের জন্য যে সকল কম্পোনেন্ট প্রয়োজন হয় তাদের সমন্বয়কে স্পার্ক ইগনিশন ফুয়েল সিস্টেম বলে। নিম্নে লিখিত কম্পোনেন্ট বা অংশগুলো নিয়ে এস. আই ইঞ্জিন ফুয়েল সিস্টেম গঠিত।


পেট্রোল ইঞ্জিনের জ্বালানী পদ্ধতি
চিত্রঃ পেট্রোল ইঞ্জিনের জ্বালানী পদ্ধতি


১। ফুয়েল ট্যাংক (Fuel tank)

২। ফুয়েল ফিল্টার (Fuel filter)

৩। এ. সি ফুয়েল পাম্প (A.C fuel pump)

৪। কার্বুরেটর (Carburetor)

৫। ফুয়েল লাইন (Fuel line)

৬। ইনটেক মেনিফোল্ড (Intake manifold)

৭। এগজষ্ট মেনিফোল্ড (Exhaust manifold)

৮। এয়ার ক্লিনার (Air cleaner) ইত্যাদি।

নিম্নে বিভিন্ন যন্ত্রাংশের কাজ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলঃ-

১। ফুয়েল ট্যাংক (Fuel tank):

এটা ফুয়েল জমা রাখার পাত্র বিশেষ। একে ইঞ্জিন থেকে দূরে নিরাপদ স্থানে স্থাপন করা হয়। এটির মধ্যে ইঞ্জিনের জ্বালানিকে জমা রাখা হয়।


২। ফুয়েল ফিল্টার (Fuel filter):

এটি জ্বালনিতে অবস্থিত বিভিন্ন ধরণের সূক্ষ্ম ময়লা অপসারণ করে জ্বালানিকে পরিষ্কার করে থাকে যার ফলে জ্বালানি সহজেই দহন ঘটে এবং জ্বালানি লাইন ও ইঞ্জিন সিলিন্ডারে কোন প্রকার অপদ্রব্য জমা হয় না। পেট্রোল ইঞ্জিনের কার্বুরেটরে পরিষ্কার জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ফুয়েল ট্যাংক এবং এসি ফুয়েল পাম্পের মাঝে ফুয়েল ফিল্টার সংযুক্ত করা হয়।


৩। এ. সি ফুয়েল পাম্প (A.C fuel pump):

জ্বালানিকে ট্যাংক থেকে কার্বুরেটরে পৌছে দেওয়া এ.সি. ফুয়েল পাম্পের প্রধান কাজ। এ পাম্প স্বয়ংক্রিয় ভাবে কার্য পরিচালনা করতে পারে বলে একে অটোমেটিক কন্ট্রোল পাম্প বা এ.সি. ফুয়েল পাম্প বলা হয়। এ. সি. ফুয়েল পাম্প প্রধাণত তিন ধরণের হয়ে থাকে। যথা-

            (ক) মেকানিক্যাল এ.সি. ফুয়েল পাম্প।

            (খ) ইলেকট্রিক্যাল এ.সি. ফুয়েল পাম্প।

            (গ) কম্বিনেশন এ. সি. ফুয়েল পাম্প।

৪। কার্বুরেটর (Carburetor):

কার্বুরেটর ইঞ্জিনের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন অনুপাতে এয়ার ফুয়েল মিশ্রণ তৈরি করে ইঞ্জিন সিলিন্ডারে সরবরাহ করে। একে পেট্রোল ইঞ্জিনের রান্নঘরের সাথে তুলনা করা যায়। 

কার্বুরেটরে ছয়টি সার্কিট থাকে। যথা-

            (ক) ফ্লোট সার্কিট।

            (খ) আইডেল সার্কিট।

            (গ) লো স্পিড সার্কিট।

            (ঘ) হাই স্পিড সার্কিট।

            (ঙ) হাই স্পিড ফুল পাওয়ার সার্কিট।

            (চ) অ্যাকসেলারেটিং পাম্প সার্কিট।

৫। ফুয়েল লাইন (Fuel line):

এটি দ্বারা জ্বালানি তেল বিভিন্ন স্থানে পরিবহণ করে জ্বালানি দহণ কার্য পরিচালনা করা হয়। সাধারণত জ্বালানি ট্যাংক হতে ইঞ্জিন সিলিন্ডার পর্যন্ত ফুয়েল সিস্টেমের সকল মেকানিজমের মাঝেই এই ফুয়েল লাইন থাকে।

৬। ইনটেক মেনিফোল্ড (Intake manifold): 

এ পথ দিয়ে পেট্রোল ইঞ্জিনের বাতাস এবং জ্বালানির মিশ্রণ এবং ডিজেল ইঞ্জিনে শুধুমাত্র বিশুদ্ধ বাতাস ইঞ্জিন সিলিন্ডারে প্রবেশ করে থাকে।


৭। এগজষ্ট মেনিফোল্ড (Exhaust manifold): 

ইঞ্জিনে জ্বালানি দহনের পর এই পথ দিয়ে উক্ত পোড়া গ্যাস প্রকৃতিতে মুক্ত হয়ে থাকে। এই পথের মুখে সাইলেন্সার পাইপ লাগানো থাকে যা অবাঞ্চিত শব্দকে হ্রাস করে থাকে। যার ফলে শব্দ দূষণ এর মাত্রাও হ্রাস পায়।


৮। এয়ার ক্লিনার (Air cleaner):

এটি এক প্রকার ছাকুনি বিশেষ যা বাতাসে অবস্থিত ধুলা-বালি এবং বিভিন্ন ধরণের ময়লাকে দূর করে বিশুদ্ধ বাতাস ইঞ্জিন সিলিন্ডারে পাঠাতে সাহায্য করে ফলে ইঞ্জিন সিলিন্ডারের অভ্যন্তরে কোন ক্ষতি সাধিত হয় না।

কার্যপ্রণালীঃ- 

ফুয়েল ট্যাংকে পেট্রোল ফুয়েল জমা থাকে। এসি পাম্প বা লো প্রেসার পাম্পের মাধ্যমে ঐ পেট্রোল জ্বালানি ফুয়েল ফিল্টারে পরিশোধিত হয়ে চাপযুক্ত হয়ে কার্বুরেটরের ফ্লোট চেম্বারে গিয়ে পৌছায়। ইঞ্জিনের সাকশান স্ট্রোকে যখন বায়ুশূন্যতার সৃষ্টি হয় তখন ইনটেক মেনিফোল্ড দিয়ে বাতাস এবং ফ্লোট চেম্বার হতে মেইন জেটের মধ্য দিয়ে পেট্রোল জ্বালানি কার্বুটেররের ভেনচুরিতে প্রবেশ করে। কার্বুরেটরের ভেনচুরিতে বাতাস এবং জ্বালানি ইঞ্জিনের প্রয়োজন অনুসারে মিশ্রিত হয় এবং সাকশান স্ট্রোকে ঐ মিশ্রন ইনটেক মেনিফোল্ডের মধ্য দিয়ে ইঞ্জিন সিলিন্ডারে প্রবেশ করে। কম্প্রেশন স্ট্রোকে উক্ত জ্বালানি এবং বাতাশের মিশ্রণকে সংকুচিত করা হয়। এবং এই সংকুচিত বাতাস এবং জ্বালানির মিশ্রণকে স্পার্ক প্লাগের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক স্পার্ক দ্বারা প্রজ্জলন ঘটানো হয়ে থাকে। এর ফলে সংকুচিত মিশ্রণ প্রচন্ড তাপ ও চাপে আবারো প্রসারিত হয় এবং শক্তি উৎপন্ন করে। এগজষ্ট স্ট্রোকে উক্ত পোড়া গ্যাস এগজষ্ট মেনিফোল্ড দ্বারা বাইরে চলে যায়।

পেট্রোল ইঞ্জিনের মূল অংশ হল কার্বুরেটর যা জ্বালানিকে প্রয়োজন অনুসারে বাতাসের সাথে মিশ্রণ ঘটিয়ে ইঞ্জিন সিলিন্ডারে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। তাই কার্বুরেটরকে পেট্রোল ইঞ্জিনের রান্নাঘরের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। এটিই পেট্রোল ইঞ্জিনের জ্বালানি পদ্ধতির মূল প্রাণকেন্দ্র।

আরও আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করুন- Join now

Post a Comment

Previous Post Next Post