সোলার প্যানেলঃ
সোলার প্যানেল এর উপর আলো পড়লে এর থেকে বিদ্যুত শক্তি পাওয়া যায়। অর্থাৎ সোলার প্যানেল আলোক শক্তিকে বিদ্যুত শক্তিতে রুপান্তর করে দেয়।ছোট ছোট সোলার ফটো সেল এর সমন্ময়ে সোলার প্যানেল তৈরী করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন জ্বালানীর সমাপ্তিলগ্নে বিকল্প শক্তির উৎস হল সৌর শক্তি যা সোলার প্যানেলের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব। সোলার প্যানেল ২০ বছরেরও বেশী সময় ধরে বিদ্যুত সরবরাহ করতে পারে।
সোলার প্যানেল কয়েক বর্গ মিলিমিটার হতে কয়েক বর্গমিটার পর্যন্ত তৈরী করা হয়। এর একদিকে সুরমা বা কালো বা বাদামী বর্নের ফটোসেল এবং তার উপর কাঁচ দিয়ে চারপাশে এলুমিনিয়ামের ফ্রেমে বাধাই করা হয়। মিলিমিটার বা সেন্টিমিটার আকৃতির প্যানেলগুলোতে ফ্রেম থাকে না।
হাত ঘড়ি, ক্যালকুলেটর এ কাচের মত বাদামী বর্নের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সোলার সেল থাকে । এইরকম অনেক সেল একত্রিত করে বড় আকৃতির সোলার প্যানেল তৈরী করা হয়। সোলার প্যানেলের আকৃতি যত বড় হবে এর বিদ্যুৎ প্রদানের ক্ষমতাও তত বেশী হবে।
সাধারনত, সোলার প্যানেল এর হিসাব করা হয় ওয়াট ও ভোল্টেজের হিসাবে। আর চার্জিং এর হিসাব করা হয় এম্পিয়ার এর হিসাবে। বিভিন্ন ভোল্ট আর ওয়াটের সোলার প্যানেল হতে পারে। ক্ষুদ্রাকৃতির প্যানেলগুলো হয় খুবই কম ভোল্টের আর এদের ওয়াট হয় খুব সামান্য। যেমনঃ হাত ঘড়ি, ক্যালকুলেটর ইত্যাদির সোলার সেল।
খুব ছোট প্যানেল 3V-9V হয়। ছোট প্যানেল 10V-16V হয়, এই প্যানেল 6V প্যানেল হিসেবে পরিচিত। মাঝারি থেকে বড় প্যানেল 17V-23V হয় , এই প্যানেল 12V প্যানেল হিসেবে পরিচিত। স্ট্যান্ডার্ড প্যানেল 5 ওয়াট থেকে শুরু করে 300 ওয়াট পর্যন্ত তৈরী হচ্ছে। বেশী ভোল্ট এর সিস্টেমের জন্য একাধিক প্যানেল সিরিজে সংযোগ দেয়া হয় আর বেশী এম্পিয়ার সিস্টেমের জন্য একাধিক প্যানেল প্যারালালে সংযোগ দেয়া হয়।
সোলার প্যানেল এর ভোল্টেজ, কারেন্ট, ওয়াটঃ
সোলার প্যানেলটি যত ওয়াটের হয় সোলার সিস্টেমকে তত ওয়াটের বলা হয়। এবং সে অনুযায়ী ব্যাটারী ও কন্ট্রোলার সংযোগ দিতে হয়। প্যানেলের গায়ে যুক্ত স্টিকারে ভোল্ট, এম্পিয়ার, ওয়াট, সহ আর অনেক তথ্য দেয়া থাকে। কিছু প্রতীক ও নাম জেনে নিই—
V = Volt (বিদ্যুত প্রবাহের চাপ বা Voltage এর একক Volt)
A = Ampere (বিদ্যুতের পরিমান বা Current এর একক Ampere)
W = Watt (মোট ক্ষমতার পরিমান)
সোলার প্যানেল স্ট্যান্ডার্ড মানঃ
Power at maximum power (Pmp) = স্ট্যান্ডার্ড 5W থেকে 300W পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে
Voltage at open circuit (Voc) = 21V-23V (আদর্শ গড় মান 21V)
Load Voltage at maximum power (Vmp) = 17V-18V (আদর্শ গড় মান 17V)
Current at maximum power (Imp) = 0.2A থেকে 18A বা অধিক (ওয়াটের উপর নির্ভরশীল)
কিন্তু এদেরকে 12V এর প্যানেল হিসেবে 12V এর ব্যাটারীতে সংযোগ দেয়া হয়। কারেন্ট এর পরিমান নির্ভর করে ওয়াটের উপর, ওয়াট বেশী হলে কারেন্ট বেশী।
ব্যাটারী ফুল চার্জ হলে ব্যাটারী ভোল্টেজ 14.5V-15V হয়, আর ডিসচার্জ হলে সোলার সিস্টেমের ক্ষেত্রে 11V-11.5V এর নীচে নামতে দেয়া হয় না, এর আগেই লোড ডিসকানেক্ট করা হয় কন্ট্রোলার প্যানেল দিয়ে। 21V এর সোলার প্যানেল চার্জিং এর সময় ভোল্টেজ ড্রপ হয়ে 16V-18V পর্যন্ত হয়ে যায়। আর তাই 21V-22V না হলে ব্যাটারী ঠিক মত চার্জিং কারেন্ট এর প্রবাহ পাবে না। উল্লেখ থাকে যে, চার্জিং প্রবাহ ঠিক বা বেশী রাখার জন্য বিদ্যুত প্রবাহের চাপকে অর্থাৎ ভোল্টেজকে পরিমানে বেশী রাখতে হয়।
আমরা প্যানেলের ওয়াট হিসাবের জন্য Vmp, Imp, Pmp এর সাহায্য নিব। কয়েকটি সোলার প্যানেল এর মান নিয়ে হিসাব করি,
Vmp × Imp = Pmp
17V × 1.18A = 20W (প্রায়)
17V × 2.36A = 40W (প্রায়)
17V × 5.01A = 85W (প্রায়)
এখানে দেখা যাচ্ছে, ভোল্ট(V) একই থাকলেও বিভিন্ন ওয়াটের(W) ক্ষেত্রে এম্পিয়ার(A) ভিন্ন, ওয়াট যত বেশী এম্পিয়ার তত বেশী হবে। অর্থাৎ, বেশী ওয়াটের সোলার প্যানেল বেশী পরিমানে কারেন্ট সরবরাহ করতে পারে। প্যানেল ক্রয়ের সময় Volt, Ampere, Watt দেখে নিতে হয়।
বি.দ্রঃ 20.06, 40.12, 102 এই রকম ফলাফল হিসাবের সুবিধার্থে এড়িয়ে যাওয়া হয়, এবং দশমিকের পরের মান বা বড় মানের সাথের ক্ষুদ্র মান বাদ দিয়ে 20, 40, 100 এইভাবে ধরা হয়। এতে কোন সমস্যা নাই, কারন সোলার এর প্রকৃত আউটপুটে ±মান বা টলারেন্সের পরিমান অনেক বেশী হয়।
ছবিঃ সোলার প্যানেল |