টার্বোচার্জার বা সুপারচার্জিং পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

টার্বোচার্জার বা সুপারচার্জিং পদ্ধতিঃ

টার্বোচার্জার সকল ইঞ্জিনে থাকে না। সাধারণত যে সকল ইঞ্জিনকে অধিক লোড বহন করতে হয় এবং অধিক গতিতে চলতে হয় সে সকল ইঞ্জিনে এ ব্যবস্থাটি বিদ্যমান থাকে। সুপারচার্জার এর কাজ হল উচ্চ গতিতে ইঞ্জিন চলার সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ বাতাস ইঞ্জিন সিলিন্ডারে পৌছে দেওয়া। কারণ উচ্চ গতিতে ইঞ্জিন চলার সময় প্রতিটি স্ট্রোকের কার্য সম্পাদনের সময় খুবই কম পায়। সাকসান স্ট্রোকে বাতাস প্রবেশের সময় কম হলে পর্যাপ্ত বাতাস ইঞ্জিন সিলিন্ডারে প্রবেশ করতে পারে না, ইঞ্জিনের দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব হয় না। এ সমস্যা দূর করার জন্য সুপারচার্জার অতি অল্প সময়েই ইঞ্জিন সিলিন্ডারে পর্যাপ্ত পরিমাণ বাতাস প্রবেশ করিয়ে থাকে। এটি ইঞ্জিনের দক্ষতা বৃদ্ধিতে খুবেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সুপারচার্জারকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা হয়ঃ-

১। পিস্টস সিলিন্ডার প্রকৃতি (Piston and Cylinder Type)

২। পজেটিভ রোটরি ব্লোয়ার প্রকৃতি (Positive Rotary Blower Type)

৩। সেন্ট্রিফিউগ্যাল প্রকৃতি (Positive Rotary Blower Type)

সুপার চার্জারে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ সমূহঃ-

১। কম্প্রেশর সেকশনঃ

                  ক) কম্প্রেসর হুইল

                  খ) কম্প্রেসর হাউজিং

                  গ) টার্বাইন ব্লেড

২। টার্বাইন সেকশনঃ-

                  ক) টার্বাইন হুইল

                  খ) টার্বাইন হাউজিং

                  গ) ব্লোয়ার

৩। সংযোগকারী শ্যাফট।

৪। বিভিন্ন সিল ও আনুসাঙ্গিক।

টার্বোচার্জারের বিভিন্ন অংশ  সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা দেওয়া হলঃ

১। কম্প্রেশর সেকশনঃ- এই সেকশন বাইরে থেকে বিশুদ্ধ বাতাস টেনে এনে ইঞ্জিন সিলিন্ডারে সরবরাহ করে। এর মধ্যে একটি পাখা কিংবা ব্লোয়ার প্রকৃতির অংশ থাকে যা বাইরে থেকে বাতাস টেনে আনে। এটি যেহেতু বাইরের বাতাস কিছুটা চাপযুক্ত করে ইঞ্জিন সিলিন্ডারে প্রবেশ করায় তাই একে কম্প্রেসর সেকশন বলা হয়। এটি এয়ার ক্লিনার এর পরে ইনটেক মেনিফোল্ডের উপর বসানো থাকে।

২। টার্বাইন সেকশনঃ- এটি মূলত কম্প্রেসর সেকশনের ন্যায় একটি পাখা কিংবা ব্লোয়ার দ্বারা গঠিত। এটির পাখাগুলো বা ব্লেডগুলো কম্প্রেশর সেকশনের বিপরীত দিকে লাগানো থাকে। এটি মূলত এগজষ্ট গ্যাসের ধাক্কায় ঘূর্ণন গতি প্রাপ্ত হয়। এটি এগজষ্ট মেনিফোল্ডের উপর বসানো থাকে।


৩। সংযোগকারী শ্যাফটঃ- এটি কম্প্রেশর সেকশন এবং টার্বাইন সেকশন এর মাঝে সংযোগ রচনা করে থাকে। যেহেতু দুইটি সেকশনের ব্লেডগুলি বিপরীত দিকে অবস্থান করে সহেতু একটি পোড়া গ্যাসের ধাক্কায় যখন ঘোরে তখন শ্যাফটের মাধ্যমে অপরপ্রান্তও ঘূর্ণন গতি প্রাপ্ত হয়। যার দ্বারা বাইরের বাতাস ইঞ্জিন সিলিন্ডারে প্রবেশ করে।

টার্বোচার্জারের কার্যপ্রণালীঃ-

 টার্বাইন সেকশনটি এগজষ্ট মেনিফোল্ডের উপর বসানো থাকে। জ্বালানি দহণের ফলে এগজষ্ট গ্যাসে প্রচুর পরিমাণ শক্তি বিদ্যমান থাকে। এই গ্যাস যখন বাইরে বের হওয়ার সময় টার্বাইন সেকশনের ব্লেডকে আঘাত করে তখন টার্বাইন সেকশনের ব্লেডটি ঘূর্ণনগতি প্রাপ্ত হয়। এর সাথে শ্যাফট সংযুক্ত থাকার কারণে অপর প্রান্তে ইনটেক মেনিফোল্ডের উপর সংযু্ক্ত কম্প্রেসর সেকশনটির রানার ও ঘূর্ণনগতি প্রাপ্ত হয়। যেহেতু এটির ব্লেড বিপরীত দিকে বসানো থাকে তাই এটি বাইরের বাতাস টেনে ভিতরে নিয়ে আসে। ইঞ্জিনের জ্বালানী সরবরাহ যখন বৃদ্ধি করে ইঞ্জিনের ঘূর্ণন গতি বৃদ্ধি করা হয় তখন টার্বাইন এর ঘূর্ণন গতি বৃদ্ধির সাথে সাথে কম্প্রেসর সেকশনের ঘূর্ণন গতি বৃদ্ধি পায় ফলে অতিরিক্ত বাতাস চাপযুক্ত হয়ে ইঞ্জিন সিলিন্ডারে ঢোকার সুযোগ পায় এবং ইঞ্জিনের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। উচ্চ গতিতে ইঞ্জিন চলার সময় ইনটেক ভালভ খুব কম সময় খোলে ফলে ইঞ্জিন সিলিন্ডারে ঠিকমত বাতাস প্রবেশ করতে পারে না। এ সময় টার্বোচার্জার বা সুপারচার্জার এই প্রকৃয়ায় ইঞ্জিন সিলিন্ডারে বাতাস প্রবেশ করাতে সাহায্য করে। এটা ছোট এবং কম ক্ষমতা সম্পন্ন ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে খুব একটা প্রয়োজন না হলেও বড় এবং উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ইঞ্জিন টার্বোচার্জার ছাড়া চলতে পারে না। ইঞ্জিনের আকার আকৃতি অনুযায়ী টার্বোচার্জার এর আকার আকৃতিও ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে মূল কার্যপ্রণালী একই। এবং একে প্রতিনিয়ত নানান মেকানিজম এর মাধ্যমে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।

টার্বোচার্জার এর বিভিন্ন অংশ
চিত্রঃ টার্বোচার্জার এর বিভিন্ন অংশ


إرسال تعليق

أحدث أقدم